ইসরায়েল-হামাস চলমান যুদ্ধে হামাসের পক্ষ নিয়ে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোয় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দ্বিতীয় জাহাজডুবিতে সমুদ্র পথে বাণিজ্য নিয়ে মহাচিন্তায় ইসরায়েল থেকে ও পশ্চিমাজোট।
ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন হুতিদের সামরিক বাহিনী লোহিত সাগরে ‘টিউটর’ নামের দ্বিতীয় আরেকটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে। ডুবে যাওয়ার পূর্বে গ্রিসের মালিকানাধীন কয়লাবাহী জাহাজটি টিউটর হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরকভর্তি দূরনিয়ন্ত্রিত নৌকার আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।ইউকেএমটিও, হুতি ও অন্যান্য মাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, গ্রিসের মালিকানাধীন কয়লাবাহী জাহাজটি গত ১২ জুন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ডুবে যায়।
এতে গতকাল বুধবার (১৯ মে, ২০২৪) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছেন, “জাহাজ মালিকরা আশা করছেন লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা ঠেকাতে পশ্চিমাজোটের কাছে জোরালো আহ্বান জানান।”
এর আগে হুতিদের হামলায় আরো একটি জাহাজ লোহিত সাগরে ডুবে যায়।ডুবে যাওয়া প্রথম জাহাজটি ছিল যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন ‘রুবিমার’। হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ২ মার্চ জাহাজটি ডুবে যায়।
ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে গত বছরের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক নৌযানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে। এ পর্যন্ত তারা ৭০টির বেশি হামলা চালিয়েছে। তারা একটি জাহাজ ও তার ক্রুদের আটক করেছে এবং অন্তত তিন নাবিককে হত্যা করেছে।
এতে শীর্ষস্থানীয় নৌপরিবহন কোম্পানিগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, নিরপরাধ নাবিকদের তাদের কাজ করতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হচ্ছে। যে কাজগুলো বিশ্বকে উষ্ণ, খাদ্য ও পোশাক সরবরাহে সহায়তা করে। এই হামলাগুলো এখনই বন্ধ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, ‘এসব হামলা এখনই থামাতে হবে। জাহাজকর্মীদের রক্ষায় আমরা শক্তিশালী দেশকে তাদের প্রভাব খাটাতে বলছি। দ্রুত সংঘাতময় লোহিত সাগরে শান্তি ফিরিয়ে আনার অনুরোধও করছি।’
প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক নৌ সেনারা পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে রক্ষায় লোহিত সাগরে নিয়মিত টহল দিলেও হুতিদের হামলার সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
গতকাল বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্র সংবাদ সংস্থাটিকে বলেছে, হুতিদের দূর নিয়ন্ত্রিত নৌকা দিয়ে হামলার কারণে উদ্বেগ বেড়ে গেছে।ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে জাহাজগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ভেসেল প্রটেক্ট’র বিমা বিশেষজ্ঞ মুনরো অ্যান্ডারসন জানিয়েছেন যে গত মে মাসে হুতিরা পাঁচবার হামলা চালালেও চলতি জুনে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০-এ। এসব হামলার কারণে জাহাজের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার খরচ বেড়েছে। দ্বিতীয় জাহাজডুবির কারণে যে খরচ আরও বেড়ে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
হামলা থেকে রক্ষা পেতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে আফ্রিকার দক্ষিণে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে ইউরোপে যাওয়া-আসাটাই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা।